E-Commerce প্রতারক চিনে নিন

MLM Company ‌‌-র প্রতারণার কথা জানেন না এমন মানুষ এদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ কারণে প্রতারক চক্র নতুন ভাবে কোন এমএলএম ব্যবসা শুরু করার কথা না ভেবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি, যে দেশের জনগণ অলস এবং লোভী সে দেশেই ছদ্মবেশী প্রতারক চক্র বেশি গড়ে ওঠে। বিভিন্ন প্রকার জুয়া খেলা, মোবাইল ব্যাংকিং ও ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, এই প্রতারক চক্র। আর এখন তো মাত্র ২ হাজার টাকা খরচ করেই প্রতারণা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে এই E-Commerce নামক চমৎকার সেবাটি। অধিকাংশ মানুষই ই-কমার্স সেবা প্রদানকারীকে ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ না করেই, তাদের সেবা গ্রহণ করে থাকেন এবং তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। বিশ্বাস করা অবশ্যই একটি ভাল গুণ বটে, তবে বিচক্ষণতার সাথে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজেদেরকে পরিচালনা করতে শেখাটাও অত্যন্ত জরুরী। কারণ, আমাদের সমাজে সাধু ব্যক্তির চেয়ে অসাধু ব্যক্তির সংখ্যাটাই অনেক বেশি।

ই-কমার্সে প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যে কাজগুলো করা জরুরি তারমধ্যে অন্যতম সহজ কাজ হলো, কোনভাবেই বা কোন ক্ষেত্রেই অগ্রিম অর্থ প্রদান না করা। সেটা যদি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে যা কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য অগ্রিম নেয়া হয়, তবে সেটা প্রদান করা যেতে পারে কিন্তু এর বাহিরে অন্য কোন ক্ষেত্রে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। হোক সেটা বিশাল মূল্য ছাড় কিংবা পুরোটাই ছাড় পাওয়ার মতো বিষয়। অর্থাৎ, যারা কেবল Payment on Delivery বা পণ্য হাতে পাওয়ার পরে মূল্য পরিশোধ করার মতো সুবিধা প্রদান করে থাকে, শুধু তাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করতে চেষ্টা করুন।

আরেক প্রজাতির প্রতারক চক্র রয়েছে যারা Payment on Delivery সুযোগটি প্রদান করে ঠিকই, তবে তারা একটি পণ্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পৃথক একটি পণ্য বা বস্তু বিক্রেতাকে প্রেরণ করে থাকে। এই জাতীয় প্রতারণা এড়াতে, আপনি যেই কুরিয়ার বা পার্সেল সার্ভিস এর মাধ্যমে পণ্যটি হাতে পাবেন অথবা পেয়েছেন, তাদের সম্মুখেই পণ্যটি খুলে দেখে নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল তাদেরকে মূল্য পরিশোধ করতে চেষ্টা করুন। আর এই সেবা বা সুযোগটি যে কুরিয়ার প্রদান করবে না, তাদের মাধ্যমে আপনার পণ্যটি গ্রহণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এই দুটি পদ্ধতি মেনে চললে আপনাকে অধিকাংশ প্রতারণার শিকার হতে হবে না।

তবে, এখানেই শেষ নয়। ই-কমার্স অর্থ এই নয় যে আপনার সেখান থেকে যেকোনো পণ্য ক্রয় করা বুদ্ধিমানের পরিচয় হবে। পণ্যের ধরন নির্বাচনেও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। যে সকল পণ্য মূল্যবান যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নকল হয়ে থাকে, যে সকল পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টির প্রয়োজনীয়তা থাকে অর্থাৎ ক্রয় করে ব্যবহার করাই যেখানে শেষ কথা নয় এবং কোন প্রকার ঔষধ E-Commerce -এ ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতারক চক্র অধিক মূল্যের পণ্যটি নকল করে গ্রাহকের নিকট বিক্রয় করে লাভবান হন। যেই পণ্যগুলোর দীর্ঘ দিন গ্যারান্টি অথবা ওয়ারেন্টি থাকে, সেই পণ্যগুলো তারা চোরাই পথে বা অবৈধ পথে ক্রয় করে। অধিকাংশ সময় তারা পুরনো বা নষ্ট থাকা পণ্য মেরামত করে এবং নতুন করে প্যাকেজিং ও পেইন্টিং এর মাধ্যমে গ্রাহকের নিকট অধিক মূল্যে বিক্রয় করে প্রতারণা করে থাকে। আর কোন ঔষধ এবং প্রসাধনী ভেজাল করা কতোটা সহজ এবং কি পরিমাণে হয়ে থাকে, যারা খবর পড়েন বা শোনেন, তারা নিশ্চয়ই প্রত্যেকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।

কোন সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা অসাধু কার্যকলাপ কোন দেশে বন্ধ হয়নি। কারণ, এটি কখনোই সম্ভব নয়। এগুলো কেবলমাত্র জনসাধারণের সচেতনতা এবং বুদ্ধিমত্তা দ্বারাই দূর করা সম্ভব। ই-কমার্সও কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান। তাই এটিও যাচাই-বাছাই করা অসম্ভব কিছুই নয় এবং এর মাধ্যমেই কেবল এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন করা উচিত। আপনি যখন প্রতারণার শিকার হবেন তখন যেহেতু ক্ষতিটি একান্ত আপনারই হবে, তাই সচেতনতার বিষয়টিও কিন্তু আপনার নিজের দায়িত্ব যা থেকে কোনভাবেই দ্বায় এড়ানো সম্ভব হবে না। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সেই দায়িত্বটি পালন করতে নিশ্চয়ই একজন ভুক্তভোগীর মতো আন্তরিক হবেন না, বিষয়টি এমনটাই স্বাভাবিক। তাই আসুন নিজের নিরাপত্তায় ও সচেতনতায় আমরা প্রত্যেকেই বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে উঠি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেই শিক্ষাই প্রদান করি।

Comments

Popular posts from this blog

Google Question Hub বিশ্লেষণ

লেখাপড়ার পাশাপাশি সহজেই যে কাজগুলো করা যায়