লেখাপড়ার পাশাপাশি সহজেই যে কাজগুলো করা যায়

প্রচলিত একটি কথা দিয়ে শুরু করা যাক- "গ্রামের মানুষের তুলনায় শহরের মানুষগুলো অনেক এগিয়ে থাকে"। না! আমি কোন মানুষকে বড় বা ছোট করছি না বরং এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কারণ নিয়ে আলোচনা করছি, একটি "জ্ঞান" ও আরেকটি "সুযোগ-সুবিধা"। ইন্টারনেটের কল্যাণে, যে পার্থক্য গুলো খুব সহজেই দূর করা সম্ভব হয়ে যায়। এর জন্য প্রয়োজন হবে শুধু মেধা আর প্রবল ইচ্ছা, ভালো কিছু করার প্রতি। অবশ্য এটিই আমাদের প্রতিবন্ধকতার প্রধান কারণ। আমরা অনেক কিছুই চাই, কিন্তু প্রবল ইচ্ছা শক্তির অভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে না। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, শুধু এই দেশেই নয় বরং পৃথিবীব্যাপী যত সফল ব্যক্তি রয়েছেন, তারা কেবল তাদের প্রবল ইচ্ছা শক্তির কারণেই সফল হয়েছেন। ইচ্ছাশক্তির ক্ষমতা নিয়ে অন্য কোনদিন লিখব। আজ, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি খুব সহজেই যে কাজগুলো ঘরে বসেই করা যায় যা, তাদের ভবিষ্যতের পথচলাকে এবং কর্মক্ষেত্রকে সহজতর করে দেবে, সেই বিষয় শেয়ার করব।

ঘরে বসে খুব সহজেই শত-শত, হাজার-হাজার ডলার ইনকাম করার মতো যদি আমার Article টির নামকরণ করতাম, তবে অনেক বেশি অলস এবং কম মেধাসম্পন্ন পাঠক পাওয়া যেত সত্যই, যেটা আমার মোটেই কোন উদ্দেশ্য নয়। ইতিহাসে কোন অলস এবং কম মেধাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মতো নিদর্শন এখনো পাওয়া যায়নি। তাই এখনো মনে মনে এই ধারণা লালন করে যারা বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রকারের লোভনীয় ভিডিও এবং ব্লগের পিছনে ছুটে সময় অপচয় করছেন, অনুগ্রহ করে আপনারা এ ধারণাটি পরিবর্তন করুন। আয় করা কখনোই এবং কোথাও সহজ নয়। আমার উদ্দেশ্য যারা সত্যিকার অর্থেই লেখা পড়ার ক্ষতি না করে কিছু করার প্রতি প্রবল আগ্রহী, তাদেরকে ভালো ও সহজ কিছু পথের সন্ধান দেয়া এবং সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রারম্ভিক কাজ গুলো কি সেটা নিয়ে আলোচনা করা, যাতে করে আমাদের মতো এখনকার প্রজন্মের কি করতে হবে শুধু এটিই খুঁজে বের করতে বছরের পর বছর, পার করতে না হয়। তারা বরং সেই সময়টি তাদের পছন্দের ও আনন্দের পথ বেছে নিয়ে, নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্যবহার করতে পারে।

বাংলা ভাষার পাশাপাশি আপনার যদি ইংরেজিতে ও অন্য ভাষার উপর দক্ষতা থাকে, তবে এই দক্ষতা কে আপনি কাজে লাগাতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা তাদের সেবাকে প্রসার করার জন্যে ট্রান্সলেটর নিয়োগ করে থাকেন বা পার্ট টাইম কাজ করিয়ে থাকেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে এমন কাজের সন্ধান পেতে পারেন। আবার বিদেশি ভালো ভালো আর্টিকেল এবং ভিডিওকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর করার মাধ্যমে, নিজের বা অন্যের জন্য কন্টেন্ট তৈরির কাজ অনায়াসেই শুরু করা যায়। পাশাপাশি অনলাইনে ভাষা শিক্ষা প্রদান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে যার যত বেশি ভাষার উপর দক্ষতা থাকবে, তার জন্য ততবেশি কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যাবে। আবার আপনি যদি অনর্গল সুন্দর করে কথা বলতে পারেন, তবে Virtual Assistant বা Call Center এর মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে অনলাইনেই যুক্ত হতে পারেন।

আপনার যদি গণ সংযোগ থাকে অর্থাৎ অনেক বন্ধু-বান্ধবী, শিক্ষকদের সাথে সুসম্পর্ক থাকে তবে, তাদেরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের, বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন বিষয়ের ভালো-ভালো ছাত্র ও শিক্ষকের হ্যান্ড নোট সংগ্রহ করে অনলাইনে কম মূল্যে বিক্রয় করতে পারেন। এর পাশাপাশি আপনি অনলাইন কোর্স এবং ট্রেনিংও বিক্রয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ভালো কোর্স ও ট্রেনিংয়ের জন্য রিসার্চ করতে হবে এবং তাদের সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য যোগাযোগ করতে হবে। পরবর্তীতে আপনি ভালো ছাত্র ও শিক্ষকের সমন্বয়ে নিজে থেকেই বিভিন্ন প্রকার অনলাইন কোর্স চালু করার সুযোগ পাবেন।

আপনার যদি ছবি তোলা বা আঁকা-আঁকির প্রতি আগ্রহ থাকে এবং এটির প্রতি আপনার ভালো লাগা কাজ করে, তবে ফটোগ্রাফি ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজটি শিখতে পারেন। এটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ছোট-ছোট ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে বড়-বড় ই-কমার্স সাইট পর্যন্ত, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ফটোগ্রাফার এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনারের প্রয়োজনীয়তা থাকে। শুধু তাই নয় বিয়ে, জন্মদিন বা বিভিন্ন রকম ইভেন্টের জন্য, আবার কোন কোম্পানির লোগো এবং ব্যানার ডিজাইনের কাজেও একজন ফটোগ্রাফার ও ডিজাইনার এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। এদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক অপরচুনিটি রয়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন এর সাথে সম্পৃক্ত নানা প্রকার কাজও আপনি শিখে নিতে পারেন যেমন: ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি ডিজাইন, ওয়েবসাইটের জন্য Front-end ডিজাইন বা Web Page ডিজাইন এমনকি বিভিন্ন জাতীয় ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন। এগুলোর জন্য আপনি এই জাতীয় ওয়েবসাইট ভিজিট করে আইডিয়া পেতে পারেন। তারপর সেগুলো শিখে নিজে নিজে তৈরি করার চেষ্টা করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রাথমিক পর্যায়ে শিখতে বা ধারণা পেতে অর্থ ব্যয় না হলেও, ভালো কাজের জন্য পরবর্তীতে অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হবে। ভালো গতিশীল কম্পিউটার, ভালো সফটওয়্যার এবং ভালো ক্যামেরা ক্রয়ের জন্য আর্থিক সচ্ছলতা থাকা জরুরি। আর এ কারণেই হয়তো এই বিষয়ে আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে, তাই এখানে প্রচুর সুযোগ‌ও সৃষ্টি হয়েছে।

আপনি যদি নতুন নতুন বিষয় জানার প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে আপনি সেইসব বিষয়ের উপর যত বেশি সম্ভব প্রথমে ভিডিও দেখুন ও Article পড়ুন। এতে আপনার কোন বিষয়ের উপর প্রয়োজনীয় ধারণা ও জ্ঞান চলে আসবে। যখন আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন, তখন আপনি সেই বিষয়গুলি মানুষের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন, পাশাপাশি কিভাবে কোন বিষয়কে উপস্থাপন করতে হয়, সেই দিক নির্দেশনাও ভালোভাবে জেনে যাবেন। এই ক্ষেত্রে আপনি ঐ সকল বিষয়ের উপর লিখতে শুরু করুন বা ভিডিও বানাতে শুরু করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে এগুলো করতে কোন অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজনীয়তা একেবারেই নেই। লেখালেখির কাজ করতে আপনি ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেস জাতীয় ফ্রি সেবা গুলির সাহায্য নিতে পারেন। আর ভিডিও তৈরির জন্য আপনি ইউটিউব কে বেছে নিতে পারেন। এই দুটো সুবিধাই আপনি একসাথে ফেসবুকেও পেতে পারেন। আমি দেখেছি, অনেকেরই মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা থাকে যে, ভালো ফল পেতে কেবলমাত্র কোন একটি বিষয় নিয়ে লেখালিখি করতে ও ভিডিও বানাতে হয়, যা একেবারেই সঠিক নয়। আপনি আপনার পছন্দের সকল বিষয় নিয়েই এগুলো করতে পারেন। তবে যেটাই করুন না কেন, আপনি যত নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন, ততবেশি কিছু আপনি মানুষের সামনে উপস্থাপনও করতে পারবেন। উপস্থাপন করার জন্য আপনি যখন প্রস্তুত, তখন কিভাবে ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হয় সেই বিষয়গুলি ইন্টারনেট থেকেই জেনে নিন। এগুলো কোনটিই শিখতে বা করতে আপনার কোন অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হবে না। যখন আপনি দেখবেন আপনার আর্টিকেল মানুষ পড়ছে বা আপনার ভিডিও মানুষ দেখছে, তখনই কেবল আপনার আয় করা সম্ভব হবে। আর মানুষের সমাগমের জন্য, আপনার বিষয়বস্তু গুলোকে মানসম্পন্ন অবশ্যই হতে হবে। তাই প্রথমে আয় করার চিন্তা মাথায় না রেখে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে বেশি বেশি জ্ঞান অর্জন করতে চেষ্টা করুন, তারপর সেগুলো নিজের মত করে উপস্থাপন করুন।

আপনি যদি Logic ভালো বোঝেন বা গণিত ভালোবাসেন তবে Software Development এবং ওয়েবসাইটের Back-end Development শেখা শুরু করতে পারেন। আমাদের বাড়ি ঘর নির্মাণ কাজ যেমন চলতেই থাকবে, তেমনি ভাবে এই কাজটিও চলতেই থাকবে। আর এ কারণেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও Back-end ডেভেলপমেন্টের বাজারে অনেক প্রতিযোগীদের সম্মুখীন হতে হবে। এই কাজগুলো শিখতে আপনার প্রচুর Resource -এর প্রয়োজন হবে পাশাপাশি সময়, ধৈর্য এবং অধ্যবসায় তো বটেই। Software Development -এর অনেকগুলো ক্যাটাগরি থাকায় আপনাকে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার সাথে কাজটি শেখা শুরু করতে হবে। এর জন্য আপনার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা জরুরি। বিষয়টি এমন নয় যে, এক বা দুই বছর শেখার পরে আয়-রোজগার করতে পারবেন। এই বিষয়ে আপনার ভালোলাগা ও ইচ্ছা থাকলে লেখাপড়ার পাশাপাশি এটি শেখা শুরু করতে পারেন, ফলে অনেকের থেকে আপনি এগিয়ে থাকবেন এবং কাজ শুরুও অনেকের থেকে আগেই করা সম্ভব হবে। ওয়েবসাইটের ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট এতটা কঠিন ও Time Consuming নয়, তাই ছাত্র-ছাত্রীদের এই বিষয়টিও অনেক আকৃষ্ট করে, আর এভাবেই প্রতিযোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলতে আপনাকে অনেক মেধা সম্পন্ন হওয়া জরুরী এবং নিজের যোগ্যতাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে শেখাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেটে খুঁজলেই প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পাওয়া যায় তাই এই কাজটি শিখতেও কোন ধরনের অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজনীয়তা নেই।

আপনার যদি মানুষকে Influence করার মতো ক্ষমতা বা Motivate করার মতো ক্ষমতা থাকে, আবার লিডারশীপে ভাল অভিজ্ঞতা থাকে, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা ড্রপ শিপিং এর মতো কাজগুলো শুরু করতে পারেন। এতে যখন ভালো ফলাফল দেখতে পাবেন, তখন নিজেই একটি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করতে পারেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই মার্কেটিং এর জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। প্রথমে আপনি শুধুমাত্র ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কোন প্রোডাক্ট ও সার্ভিস বিক্রি শুরু করলে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাবে। ব্যবসাটি শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই পণ্য, সেবা, গ্রাহক এবং মার্কেট ও চাহিদা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরী। এর জন্য কিছু বই ও আর্টিকেল পড়ার এবং প্রয়োজনে কয়েকটি ট্রেনিং করারও প্রয়োজন হবে।

একজন ছাত্র হিসেবে অবশ্যই লেখাপড়াকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে, নিজের পছন্দ ও যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো কাজ করার, এখন অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। যেকোনো বিষয়ে নতুন কিছু করার ও নতুনভাবে ভাবার অভ্যাস, নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে যার গুরুত্ব এখানে তুলে ধরেছি। আমাদের দেশে কেবলমাত্র অল্প কিছু ছাত্র ছাত্রী এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। তবে বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই এখনো তাদের উপযুক্ত জ্ঞান ও ইচ্ছা শক্তির অভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পিতা-মাতা, শিক্ষক আমরা প্রতেকেই শুধুমাত্র আমাদের এই প্রজন্মকে ভালো দিক নির্দেশনাই দিতে পারব, এছাড়া বেশি কিছু নয়। কিন্তু, আপনাদের পছন্দ ও ইচ্ছার উপরেই কেবলমাত্র নির্ভর করবে আপনাদের প্রজন্ম ও ভবিষ্যৎ।

Comments

Popular posts from this blog

Google Question Hub বিশ্লেষণ

E-Commerce প্রতারক চিনে নিন